ইন্নাল হামদা লিল্লাহ ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রসুলিল্লাহ,

পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি, 

আরবী ভাষা শিক্ষার এই কোর্সে আপনাদের স্বাগতম। কোর্সের বৈশিষ্ট্য আলোচনার পূর্বে আমরা কেন, কখন ও কিভাবে আরবী ভাষা শিখব সেগুলো নিয়ে কিছু শেয়ার করব ইন শা আল্লাহ।

আমরা কেন আরবী ভাষা শিখব? 

অনেকেই কুরআনের অর্থ বোঝার জন্য আরবী শিখতে চান। কিন্তু সত্যি কথা হলো কেবল কুরআনের অর্থ বোঝার জন্য আরবী শেখা খুব একটা জরুরী নয়। আপনি একটা ভালো অনুবাদ পড়ুন। যদিও অনুবাদ আল্লহর কালাম নয় তবুও মূল কথা বোঝার জন্য ভালো একটা অনুবাদ যথেষ্ট। যে কথাগুলো বুঝতে কষ্ট হবে সেগুলোর তাফসির দেখুন বা কোন আলিমকে জিজ্ঞেস করুন। সুন্দর বুঝতে পারবেন। কারন আপনি যতই আরবী শেখেন না কেন তাফসির ইবনে কাসিরের মত এতো ভালো বুঝবেন না। আহসানুল বয়ানের থেকে ভালো অনুবাদ করতে পারবেন না। পারার কথা না।

তাহলে আরবী ভাষা শিখব কেন? এর অবশ্য কিছু গুরুত্বপূর্ন কারন আছে। যেমন,

১) যদি আপনি কুরআন বুঝে বুঝে তিলোয়াত করতে চান, তিলাওয়াতের সময় আল্লাহর সাথে ভাব করতে চান অর্থাৎ তিলাওয়াতকে অর্থবহ, জীবন্ত করতে চান, বেশি বেশি তিলোয়াতের মাধ্যমে তার শিক্ষাকে নিজের জন্য স্মরনিকা করতে চান তাহলে আপনাকে আরবীতেই কুরআন বুঝতে হবে। নতুবা একটা আয়াত পড়ে অতঃপর তার অর্থ দেখলে পড়ার মজা হাড়িয়ে ফেলবেন। এছাড়া আরবী না জানলে নামাজে বা অন্য কোথাও তিলাওয়াতের সময় অনুবাদ ছাড়া বুঝতে পারবেন না। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে আরবী ভাষায় কুরআন বোঝা জরুরী। 

২) আরবী জানলে কুরআনের আয়াত বা হাদিস মুখস্ত করা অনেক সহজ হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরুপ আমরা ক্বদরের প্রথম আয়াত তিনটি লক্ষ্য করি, প্রথম আয়াতে আমরা দেখছি “লাইলাতিল ক্বাদরি” পরের আয়াতগুলোতে “লাইলাতুল ক্বাদরি” । যারা আরবী জানেন না তারা মনে রাখেন এভাবে যে প্রথমে “লাইলাতিল” ও পরের দুটিতে “লাইলাতুল”। এমনিভাবে কুরআনে আপনি দেখবেন কোথাও মু’মিনুন আবার কোথাও মু’মিনিন। সাধারনভাবে মুখস্ত রাখা অনেক কষ্টসাধ্য কিন্তু আরবী জানা থাকলে বাক্যের গঠনই আপনাকে বলে দেবে কোথায় কি হবে।

৩) কুরআন হাদিসের উপস্থাপন সহজ ও প্রাণবন্ত হবে যখন আপনি ভাষার প্রয়োগ ও প্রকাশ সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। আরবী না জানলে আপনাকে আলাদা করে পুরো বাক্যের অর্থ মুখস্ত করতে হবে। সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন দ্বিগুণ সময় ও শ্রম প্রয়োজন তেমনি আয়াত বা হাদিসের শব্দে শব্দে বিচরণ করা সম্ভব হয় না।

৪) কুরআনের অনেকগুলো অলৌকিকত্বের মধ্যে একটা হলো তার ভাষা। যেটা চোখ দিয়ে দেখা যায় না, অন্তর দিয়ে দেখতে হয়। আরবী ভাষা বোঝা ব্যতীত এই আধ্যাত্মিকতা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। কুরআনের অলঙ্কার, ছন্দ ও তথ্যের উপস্থাপন এমন যে মহান আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতিকে চ্যালেঞ্জ করে রেখেছেন যে কেউ এর মত একটা সুরাও রচনা করতে পারবে না। মানুষ ও জ্বীন উভয়ে মিলেও কেন কুরআনের একটা সুরা রচনা করতে পারবে না? কি এমন গভীরতা এর মাঝে যেখানে কেউ কোনদিন পৌঁছাতে পারবে না? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদেরকে অবশ্যই আরবী জানতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা অনুবাদ কখনই আল্লাহর কালাম নয়। একটা ভাষার অনুবাদ কখনোই অনুবাদকৃত ভাষাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ একটি বাংলা কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পড়ে যদিও কবিতার ভাবার্থ বোঝা যায় কিন্তু কখনই কবিতার আসল স্বাদ ও সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যায় না।

আমরা ঠিক কখন আরবী শিখব। আমরা কি দ্বীনের বুঝ আসার প্রথমেই আরবী ভাষা শেখা শুরু করবো?

না। সেরকম নয়। প্রথমে আমরা দ্বীনের মৌলিক বিশ্বাস ও কর্ম সম্পর্কে জানব। আরবীতে কুরআন না বুঝলে কেউ জাহান্নামে যাবে না কিন্তু নিজের বিশ্বাস ও কর্ম কুরানের সাংঘর্ষিক হলে জাহান্নামে যাবে। সুতরাং মৌলিক দ্বীন শিক্ষার আগেই আরবী নিয়ে ব্যস্ত হবেন না। বরং এটা শেষ হলেই আমরা নিজেদেরকে একটু আগে বাড়িয়ে নিতে, ঈমানকে আরও পোক্ত করতে, কুরআন হাদিস মুখস্থ করার পর্যায়ে আরবী শিখব।

কিভাবে শিখব?

আমাদের দেশে মাদ্রাসাগুলোতে আরবী শেখায়। যারা পারবেন তারা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে শিখে নেবেন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষিত অনেক মানুষের পক্ষে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে আরবী শেখা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন হুজুর বা ওস্তাযের কাছে গিয়ে সময় সুযোগ মত এটা শিখতে পারি। কিছু ইন্সটিটিউশন আছে যারা ডেডিকেটেডলি আরবী ভাষা শেখায়। সেখানে কোর্স করা যায়। এছাড়াও কিছু অনলাইন কোর্স আছে যেখানে ওস্তাযরা লাইভ আরবী ক্লাস নেন। আরও রয়েছে কিছু ইন্টারক্টিভ ওয়েব সাইট বা ইউটিউব চ্যানেল। মোটকথা রিসোর্সের কোন অভাব নাই। যেখান থেকে খুশি আপনি আপনার প্রয়োজনমত আরবী শিখে নিন।

তবে অনেকসময় দেখা যায় আমরা অনেক বই বা কোর্স শেষ করি, বাক্য গঠনের অনেক নিয়ম শিখি কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসল উদ্দেশ্য অর্থাৎ কুরআন পড়ে, শুনে বোঝা সম্ভব হয় না। মূলত শব্দার্থের দূর্বলতাই এর প্রধান কারণ। এজন্য আমাদের কুরানীয় শব্দার্থ শেখার জন্য মনযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রেও আমাদের মনে রাখতে হবে যে ব্যাকরনের জ্ঞান আপনার শব্দ মুখস্থ করাকে সহজ করবে অন্যথায় হাজার হাজার শব্দ মুখস্থ করা প্রায় অসম্ভব। 

নিচে আমরা আপনাদের একটা স্টাডি প্লান দিচ্ছি। আশা করা যায় এটা শেষ করতে পারলে আপনারা আপনাদের কাংখিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবেন ইন শা আল্লাহ। 

এই কোর্সের বৈশিষ্ট্যঃ 

মূলত কোর্সটি একটি সমন্বিত প্রয়াস যা গড়ে উঠেছে ডঃ ভি. আব্দুর রহীম এর Madina Book series, দারুস সালামের Learning Arabic Language of The Quran, করাচীর আল বুশরা পাবলিকেশন্সের Lisan-ul-Quran কে অনুসরণ করে। রেফারেন্স হিসেবে আরও ব্যবহৃত হয়েছে মাসুদ রাঙ্গিনওয়ালার Essential of quranic Arabic এবং ডঃ ফজলুর রহমান স্যারের “আরবী ব্যাকরণ”, কাওয়ায়িদুল লুগাতিল আরাবিয়া ইত্যাদি। এর উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হল,

  • বর্ণ থেকে শুরু
  • তত্ত্বের সহজ ও পর্যায়ক্রমিক উপস্থাপন
  • উদাহরণের সহজবোধ্যতা ও প্রাচুর্যতা
  • তত্ত্ব সংশ্লিষ্ট কুরআনের আয়াতের উদাহরণ
  • তত্ত্বের ডায়াগ্রামেটিক উপস্থাপন
  • ভিডিও লেকচার সংযুক্ত 

 

এই কোর্সটি করে কি আমরা আরবীতে কথা বলতে পারবো? 

কথা বলার জন্য গ্রামার শিখে খুব বেশি লাভ হয় না। ভাষাভাষীর মধ্যে থাকতে হবে। ভাষাভাষীর মধ্যে থাকলে আরবী বই পড়ে শেখা লাগে না। শুনতে শুনতে শেখা হয়ে যায়। তবে সেই আরবী কুরআন বুঝতে কাজে দেবে না। আমাদের এই কোর্সটি মূলত কুরানিক আরবী যা আপনাকে কুরআন হাদিস বুঝতে সাহায্য করবে ইন শা আল্লাহ। 

মহান আল্লাহ আমাদের আরবী শিক্ষা প্রক্রিয়াকে সহজ করুক। আমীন 

কোর্স বিষয়বস্তু

9 চ্যাপ্টার • 58 পাঠ